মোঃ আবুল হোসেন সরদার, শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের ডাবল লেন সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজের নেই কোন অগ্রগতি । ৪ বছর পেরিয়ে গেলে ও শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ। সড়ক খুড়ে রাখায় ভোগান্তিতে এ রাসÍায় চলাচলকারি চালক ও যাত্রীরা। মাত্র ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় ২/৩ ঘন্টা। বেড়েছে জ্বালানি খরচ, নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়েছে বিরূপ প্রভাব । পাশাপাশি জাজিরা কলেজ মোড় থেকে ঠান্ডার মোড় পর্যন্ত বাইপাশ সড়ক না করায় সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ও বেশী গচ্চা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ ভুমি অধিগ্রহন চলাকালীন সময় শরীয়তপুরপুর -নাওডোবা সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ২৭ দশমিক ০১৩ কিেিলামিটার দৈর্ঘের এ কাজের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১হাজার ৬শ ৮২কোটি টাকা। এ সড়ক কোটাপাড়া ও কাজিরহাট নামক স্থানে দুটি ব্রীজ সহ ৩ টি প্যাকেজে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শরীয়তপুর থেকে জাজিরা টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মানের কাজ দেয়া হয় মেসার্স সালেহ আহাম্মেদ, টিএন্ডটি মোড় থেকে নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মানের কাজ দেয়া হয় মেসার্স মীর হাবিবুল আলম এন্ড মাহবুব টেড্রার্স লিমিটেড।গত ৪ বছর যাবৎ জমি অধিগ্রহন জটিলতা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারনে কাজের তেমন কোন অগ্রগতিই হয়নি। এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোন অসুস্থ রোগী নিয়ে এ সড়কে যাতায়ত করা খুবই কষ্টকর।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মুল মালিকরা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদেও আতœীয় স্বজন তথা ঐ দলের সমর্থক হওয়ায় ৫ আগষ্টের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ম্যানেজার বা নিজের লোক দিয়ে কোন রকমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।এতে করে কাজের তেমন অগ্রগতি হচ্ছেনা। প্রতিষ্ঠান।
বিশেষ করে ঈদানিং কালে ভারী বর্ষনের ফলে পদ্মাসেতু থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন স্থানে বিরাট বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদ গত মার্চ মাসে শেষ হয়ে গেলে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বার বার আবেদন করায় দফায় দফায় বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে সড়কের উন্নয়ন কাজ। ফলে সড়কের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৪ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। এ কারনে প্রকল্প মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করা হয়েছে। এ সড়কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকবল খুবই কম। নামে মাত্র শ্রমিক আর যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে ২৭ কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। পুরো সড়ক জুড়েই ভাঙ্গা চুরা আর খানাখন্দকে ভরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এ সড়কে যাতায়তকারীরা । সামান্য বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। মাঝে মধ্যে যাত্রীদের পড়তে হয় যানজট ও দুর্ঘটনায়।সূত্র আরো জানায়, জাজিরা উপজেলার একই মৌজায়
বাইপাশ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন করলে ও রাজনৈতিক জটিলতার কারনে জাজিরা কলেজ মোড় থেকে ঠান্ডার মোড় পর্যন্ত বাইপাশ সড়ক না করে উপজেলা শহরের টিএন্ডটি মোড় দিয়ে সড়কটি নির্মান করায় সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ও বেশী গচ্চা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।বর্তমান সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টার কাছে শরীয়তপুর বাসির দাবী জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কের কাজটি শেষ করে চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হোক।
বাস যাত্রী সাইফুল ইসলাম, আলম বেপারী বলেন, পদ্মা সেতু থেকে আমাদের জেলা সবচেয়ে কাছে। কিন্তু দুর্ভোগটা আমরাই সবচেয়ে বেশি পাই রাস্তা খারাপ হওয়ার কারনে। ৩ ঘন্টার জায়গায় ৬ ঘন্টা লাগে। অসুস্থ্য রোগিদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্থানীয় নেছার মাদবর বলেন, বাপ দাদার ভিটে মাটি দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু হলে আমরা শরীয়তপুরবাসি আরাম আয়েশে ঢাকা যাতায়ত করতে পারবো। রাস্তা খারাপ থাকায় সব সুখ অসুখে পরিনত হয়েছে।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার বলেন, রাস্তার কাজের ধীরগতির কারনে চরম ভোগান্তির স¦ীকার হচ্ছে পরিবহনের। এমন সড়ক দিয়ে চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যানবাহন। প্রতিনিয়ত পাল্টাতে হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। মালামাল পরিবহনেও তৈরি হয়েছে নানান রকমের ঝুঁকি।
৩নং প্যাকেজ এর সাইড ঠিকাদার বকুল আহাম্মেদ বলেন, ঠিকঠাক মতোই চলছে সড়কের কাজ। বৃষ্টিসহ নানা রকম সমস্যার কারনে আমাদের কাজে বিলম্ব হচ্ছে।
মীর হাববিুল আলম কনস্ট্রাকশন সহকারী ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলনে, রাস্তা ঠিক করতে যেসব উপকরণ লাগবে তা পর্যাপ্ত আছে। আর কাজ প্রায় শেষ মোটামুটি গোছায় আসছে। আর কিছু দিনের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে ফেলবো।
সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলনে, সড়ক নির্মাণ কাজে অধিগ্রহণ আর জমি জটিলতার কারনে আমাদের বছরের পর বছর সময় পার হয়ে যাচ্ছে।৩নং প্যাকেজের কাজের কার্যাদেশ দেরী করে দেয়া হয়েছে। মোট কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫৫% এর বেশী শেষ । এ কাজের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি ২৫ সালের ডিসেম্বর এর মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।