দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পদ্মাসেতু। ২৫ জুন পদ্মাসেতুর ফলক উন্মোচন করে দ্বার খুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ জুন সকাল থেকে সকল যানবাহন এ সেতু দিয়ে পারাপার হবে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশী বিদেশী সকল স্বরযন্ত্র পাশ কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করে প্রমান করে দিলেন আমরা ও পারি।স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে মাদারীপুরের শিবচরের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন তিনি। এর আগে শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১২টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন তিনি। সেখানে দ্বিতীয় দফায় মোনাজাতে অংশ নেন। জাজিরা প্রান্তে সেতুর মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর এক পাশে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অপর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রাস্তে সমাবেশ স্থলে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল প্রদান করেন তিনি। ১১টা ৫০ মিনিটে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমেই খুললো পদ্মা সেতুর দ্বার। দুপুর ১২টা ০৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওয়ানা হয়। সেতুর কিছুদূর যাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি থামলে দুপুর সোয়া ১২টায় বাংলাদেশে বিমানবাহিনী মহড়া শুরু করে। ফাইটার বিমান থেকে রঙ ছড়ানো হয় পদ্মার উন্মুক্ত আকাশে। লাল-সবুজসহ বিভিন্ন রঙে বর্ণিল হয়ে উঠে পদ্মার আকাশ।এ উপলক্ষে মহড়া দিয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৩১টি বিমান ও হেলিকপ্টার। বিমানবাহিনীর এ মহড়া পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিমানবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার উড়ে বেড়ায় পদ্মার আকাশে। প্রথম হেলিকপ্টারে ছিল বাংলাদেশের ছবি সংবলিত পতাকা, দ্বিতীয় হেলিকপ্টারে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি, তৃতীয় হেলিকপ্টারে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত কাপড়ের পতাকা, চতুর্থ হেলিকপ্টারে ছিল পদ্মা সেতুর অর্জন স্বপ্নজয় সংবলিত পতাকা, পঞ্চম হেলিকপ্টারে ছিল জাতীয় শ্লোগান জয়বাংলা সংবলিত পতাকা। জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় গাড়ি যোগে চলে যাওয়ার পর হাজার হাজার উৎসুক জনতা দৌড়ে সেতুতে ওঠে পরে। পরে আইন শৃংখলা বাহিনী তাদেরকে নামিয়ে নেয়। মাদারীপুরের জনসভাস্থলে পৌছিলে মঞ্চ থেকে মূহু মূহ শ্লোগান দিয়ে নেত্রীকে বরন করে নেয় আয়োজকরা। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান। মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগ কতৃক আয়োজিত জনসভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিন অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার এমপি ও জেলার নেতৃবৃন্দ গন। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩ টায় হেলিকপ্টারে ঢাকায় চলে যান। এ দিকে শিবচরের জনসভা সফল করতে দক্ষিন অঞ্চলের বরিশাল, বরগুনা পিরোজপুর, ঝালকাঠি ,খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর,গোপালগঞ্জ খেকে লাখ লাখ মানুষ বাস,লঞ্চ, ট্রলার ,সিএনজি, অটোরিক্সা ,মোটর সাইকেল সহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে রং বি রংয়ের টিশার্ট পরে সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত সভাস্থলে এসে জমায়েত হয়। তারা শ্লোগান দেয় আমার টাকায় আমার সেতু ,বাংলাদেশের পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার অবদান। উদ্বোধন উপলক্ষে শুধু পদ্মাপাড় নয়, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। একই সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশে শোভা পাচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন’ জানিয়ে নানা রঙের ব্যানার, ফেস্টুন-বিলবোর্ড।
এ দিকে এ প্রথম স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে পার হলো গ্রিন লাইন পরিবহনের ১০টি বাস। পরিবহনের মধ্যে গ্রিন লাইন প্রথম সেতু পার হয়েছে।শনিবার এসব বাস যোগে বিভিন্ন মন্ত্রী ও আওয়াামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাওয়া হয়ে জাজিরা পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে পৌঁছান।