পদ্মাসেতু উদ্বোধন, প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের ব্যাপক প্রস্তÍুতি,জনমনে আনন্দ

পদ্মাসেতু উদ্বোধন, প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের ব্যাপক প্রস্তÍুতি,জনমনে আনন্দ

Social Share Now

আবুল হোসেন সরদার,শরীয়তপুর \ স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র ১ দিন বাকি। আগামী ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় পদ্মাসেতু উদ্বোধন হচ্ছে । আর এতে করে দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের আনন্দ উল্লাসে ভাসছে পদ্মার পাড়। পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে যেন আনন্দের শেষ নেই। ঈদের চেয়ে ও বেশী আনন্দে ভাসছে তারা। তাই পদ্মানদীর পাড় ও সেতুর দু’পাড়ে নানা রকম বর্নিল সাজে সুসজ্জিত করা হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা তাদের নাম ও ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড ব্যানার পোষ্টার ,তোরনে তোরনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছেয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার পর সেতুর দুপাড়ে প্রায় ২/৩ কিলোমিটার ব্যাপী আলোক সজ্জায় সজিত করার কারনে আলোর ঝলমলে ভরে উঠে এলাকা। এ যেন সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড এর ন্যায় বিদেশী কোন পর্যটন এলাকার আলোর ঝলমলে ফুটে উঠছ্ে । পদ্মারপাড়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার উৎসুক মানুষ ভিড় করছে পদ্মাসেতুর সৌন্দর্য দেখতে। দুর থেকেই তাদের উচ্ছ¡াস প্রকাশ করতে দেখা যায়। মুর্হুর্তটি স্মরনীয় করে রাখতে অনেকেই ছবি তোলেন। কেননা এ অঞ্চলের মানুষ আগে ঢাকা যেতে সময় লাগতো ৬/৭ ঘন্টা । এখন সেতু দিয়ে সহসাই দেড় থেকে দু ঘন্টায় ঢাকা যেতে পারবে। তাছাড়া সেতুর কারনে এ এলাকায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সুন্দর সুন্দর মার্কেট দোকানপাট ,খাবার হোটেল,ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়বে। মানুষের সময় সাশ্রয় হবে। ব্যবসা বানিজ্য করে এ অঞ্চলের মানুষ স্বচ্ছলতা পাবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহসাসাই ঢাকা সহ বিভিœ্ জেলায় রপ্তানি করতে পারবে ও ন্যয্য মূল্য পাবেন। অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে এ অঞ্চলের মানুষ। সরাসরি বাস ও অন্যান্য গাড়ীতে পদ্মাসেতু দিয়ে পদ্মানদী পাড় হতে পারবে যাত্রীরা।তাদেরকে আর সর্বনাশা খড়¯্রােতের পদ্মানদী জীবনের ঝুকিনিয়ে পার হতে হবেনা। ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরী পার হতে ঘাটে বসে প্রহর গুনতে হবেনা। এ জন্য থাদের মধ্যে অনেক আনন্দ।
এ সেত উদ্বোধন কে সামনে রেখে প্রশাসনের পক্ষথেকে ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে তিন দিন ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে ২৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী কতৃক পদ্মাসেতু উদ্বোধনের সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান,সাড়ে ১১টায় কন্ঠশিল্পী নকুল বিশ্বাসএর পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান,সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কন্ঠশিল্পী অনিমেষ রায় ও ঐশী এর পরিবেশনায় কনসার্ট ২৬ জুন আনন্দ সমাবেশ,এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীম। সন্ধ্যা ৭টায় কন্ঠশিল্পী কোনাল ও জলের গান ,ব্যান্ডের পরিবেশনায় কনসার্ট। ২৭ জুন ’সমৃদ্ধির উৎসব,এর সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কন্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ,হাসান (আর্কব্যান্ড) ও রাব্বী এর পরিবেশনায় কনসার্ট। র‌্যালী ও পদ্মাসেতু দেয়াল নির্মাণ ।
এ দিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে ১২ শ এর উপরে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এদের মধ্যে পোষাকে সেনা বাহিনী , নৌবাহিনী, পুলিশ বিডিয়ার,র‌্যাব আনসার ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ডিজিএফআই, এনএস আই, এসবি ও এস এস এফ। ইতোমধ্যে তারা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছেন সেতু এলাকা সহ জনসাভাস্থল ও ফলক নির্মান এলাকা।প্রলিশ অফিসের ডিআইও-১ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগ উপজেলা আওয়ামীলীগ .পৌরসভা আওয়ামীলীগ,যুবলীগ ,ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে িেইতামধ্যে মতবিনিময় সভা , বর্ধিত সভা, ব্যানার ফেস্টুন, তোরন নির্মান, আলোক সজ্জা করা হয়েছে।শহর থেকে সেতুর পাড় পর্যন্ত তোরনে তোরনে ,ব্যানারে পোষ্টারে,বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে।জনসভাস্থলের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেখা ১৫লাখের ও বেশী লোক বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে শিবচরের বাংলাবাজার এলাকায়। সভা সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করে জেলা আওয়ামীলীগ ও স্থানীয় ৩ জন এমপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিশেষ করে পালং-জাজিরা নির্বাচনী এলাকার এমপি আওয়ামীলীগের কায়নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ৭হাজার মোটর সাইকেল, ১৫টি বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে প্রায় ১লাখের ও বেশী লোক সমাগমের উদ্যোগ ও প্রস্ততি নিয়েছেন।এ ছাড়া নড়িয়া উপজেলা পৌরসভার সহযোগিতায় স্থানীয় এমপি পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীম,ডামুড্যা,ভেদরগঞ্জ,গোসাইরহাট নির্বাচনী এলাকার এমপি নাহিম রাজ্জাক ও লোকজন সমাগমে প্রতিযোগিতায় নামছেন। আওয়ামীলীগের প্রস্ততি অনুযায়ী তারা ২০ লাখের ও বেশী লোক সমাগমের জন্য প্রস্ততি নিয়েছেন। সভাস্থলে যেতে হাজার হাজার টিশার্ট ,দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছ্ে বিশেষ করে নড়িয়া ও সখিপুরের পক্ষ থেকে ১২টি লঞ্চ,৩শ ট্রলার সহ ভাসমান নৌকাকে সাজিয়ে প্রত্যুষে নাওডোবা সেতুর কাছে রওয়া করবে।এদের সাথে মেডিকেল টীম,জরুরী ঔষধপত্র থাকবে। লঞ্চে লোকজনদের জন্য পিকনিকের আদলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে ।
পদ্মাপাড়ের মোসলেম মাদবর বলেন, বাপ দাদার ভিটে মাটি পদ্মাসেতু জন্য দিয়ে আজ আমরা ধন্য। পদ্মাসেতু আর আজ স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসি ভুমিকা নিয়ে দেশী বিদেশী সকল স্বরযন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে নিজস্¦ অর্ধায়নে সেতু নির্মাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন আমরা ও পারি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
নাওডোবা এলাকার খবির ফরাজি বলেন,আজ আমাদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ। ঈদের চেয়ে বেশী আমরা খুশি। পদ্মাসেতু চালু হলে সহসাই ঢাকা যেতে পারবে। এলাকার উন্নতি হবে। অর্থনৈতিক ভাবে আমরা লাভবান হবো।
নড়িয়া পৌরসভা মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন,পদ্মাসেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সফলতার জন্য নড়িয়া ও সখিপুরের পক্ষথেকে সকল চেয়ারম্যান ও মেয়র উপমন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীমের নেতৃত্বে ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছি। আমরা লঞ্চ ও ট্রলার যোগে
সভাস্থলে পৌছানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। সকল নেতা কর্মী সহ সহযাত্রীদের দ’ুবেলা খাবারের ব্যবস্থা যাতায়তের ব্যবস্থা করেছি।
জাজিরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে এ এলাকায় শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এ অঞ্চলের বেকারত্ব দুর হবে। ব্যবসা বানিজ্য করে এলাকার মানুষ লাভবান হবে।আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হানিাকে ধন্যবাদ ও শুচ্ছো জানাই।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা পরিষদ প্রশাসক ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে আমি পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে আন্দোলন গড়ে তুলেছি। এ সময় মানুষ আমার প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া ভাব প্রকাশ করেছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়সে সেতেু বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী পুরন করেছে। এ জন্য আল্লঅহর কাছে তাঁর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি। তিনি যেন দীর্ঘজীবি হোন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেক গুলো বৃহৎ শিল্প এখানে আসার অপেক্ষায় আছে।নদীবেষ্টিত এলাকা হিসেবে আমরা পর্যটনশিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সেতু উদ্বোধনের পর অনেক ধরনের উন্নয়ন আমরা দেখছি। শরীয়তপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এরই মধ্যে কৃষি সেক্টরে অনেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমরা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করছি। পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।এ সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আমরা ব্যাপক তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছি।প্রশাসনের পক্ষথেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর -১ আসনের সংসদ সদ্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ সহ দেশবাসিকে গর্বিত করেছেন। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।পাশাপাশি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষথেকে ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছি। আশা করি জনসভাস্থলে ২০ লাখ লোক সমাগম হবে।

Leave a Reply