পদ্মায় নৌপথে দিনে চাঁদাবাজি, রাতে ডাকাতি, অতিষ্ঠ নৌযান ব্যবসায়ীরা

পদ্মায় নৌপথে দিনে চাঁদাবাজি, রাতে ডাকাতি, অতিষ্ঠ নৌযান ব্যবসায়ীরা

Social Share Now

শরীয়তপুরে পদ্মা, মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী নৌযানে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিভিন্ন স্থানে নোংগর করা নৌ-যান থেকে দিনের বেলায় চাঁদাবাজি করছে দুর্বৃত্তরা। রাতের বেলা এসব নৌযানে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে টাকা পয়সা, মুঠোফোনসহ দামি জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যাচ্ছে ডাকাতেরা। ডাকাত ও চাঁদাবাজদের এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ নৌ-যান মালিকসহ নৌপথের ব্যবসায়ীরা। ২/১ ঘটনায় মামলা হলেও বেশির ভাগ ঘটনা আড়ালে থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভুগিরা।গত চার মাসে কেবল শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে নৌপথে অন্তত ৩২টি ডাকাতির ঘটনার অভিযোগ করেছে দুই জেলার বাল্কহেড মালিক সমিতি। চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন শ্রমিকেরা।শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী ও ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট উপজেলা ও চাদঁপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা নদী। এ নদী দিয়ে চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান, চাদঁপুর- ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। নদী দুটির বিভিন্ন সীমানায় অসংখ্য চর ও ডুবোচর রয়েছে। এসব চর ও ডুবোচরে দুর্বৃত্তরা অবস্থান নিয়ে রাতে নৌযানে আক্রমণ করে চালক ও শ্রমিকদের জিম্মি করে ডাকাতি করে। এ ছাড়া ও নড়িয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বাদশা সেক এর ছেলে শিহাব সেক পদ¥া নদীতে কয়েকদিন যাবত একটি বোর্ড দিয়ে চাদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে প্রতিটি নৌযান থেকে কমকওে ১০০০ টাকা চাদা নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের বাল্কহেড মালিক সমিতির নেতা ও শ্রমিকেরা নাম না প্রকাশ করার শতে বলছেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে শরীয়তপুর বাল্কহেড মালিক সমিতির অধীন থাকা ১৫টি বাল্কহেডে ডাকাতি হয়েছে। চাঁদপুর বালুবাহী নৌযান মালিক সমবায় সমিতির অধীন থাকা ১৫টি নৌযানে ডাকাতি হয়েছে। এর মধ্যে কেবল একটি ঘটনায় শরীয়তপুরের পালং মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ছাড়া চাঁদপুরে মেঘনা নদীর চরভেরবী, ষাটনল, ইলিশা, মল্লিকপুর, দড়িরচর, হাইমচর, এলাকায় সব জাহাজকে চাঁদা দিতে হয়। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার খাদ্য গোডাউন এলাকা থেকে শুরু করে শুরেশ^র, ওয়াপদা, চরআত্রা, খাজুরতলা, বাবুরচর, পাইনপাড়া, সিডারচর, নওপাড়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলু বাজার ফেরীঘাট, নরসিংহপুর ও কাচিকাটা, গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল, সাইক্কা, মাঝেরচর, কোদালপুর এলাকায় কিছু লোক ট্রলার দিয়ে নৌযান থেকে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকেরা বলছেন, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে এসে ১০ থেকে ১৫ জনের দল আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে নৌযানে হানা দেয়। কোথাও চাঁদা দিতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। কোথাও দিতে হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চাঁদা না পেলে তারা নৌযান শ্রমিকদের মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌযান মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে বারবার অভিযোগ করা স্বত্বেও কোনো প্রতিকার নেই বলে অভিযোগ নৌযান মালিকদের।
বালু ব্যবসায়ী আকবর আলী খান, মিজানুর রহমান, আতা খা বলেন, শরীয়তপুর অংশের নড়িয়া পৌরসভার ঢালী পাড়া, এলাকার ৫/৬ জন মিলে ও চাদপুর জেলার হাইমচর, চাদপুর ফেরিঘাট এলাকায় প্রতিদিন স্পিডবোট যোগে এই চাঁদাবাজি করে থাকে। ডাকাতি ও চাদাঁবাজির ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েও কোনো সুরাহা পাওয়া যায় না।
নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, ডাকাতি ও নৌযানে হামলার ঘটনা থামাতে এ অঞ্চলের নৌ পুলিশের নয়টি থানা ও ফাঁড়ি কাজ করছে। সম্প্রতি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি স্পিডবোট, একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও কিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে একটি ডাকাতির মামলা হয়েছে। ঘটনা ঘটার পর মামলা না করলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

Leave a Reply