শরীয়তপুরে দীর্ঘ ৪০ বছর সনাতন ধর্ম পালন করে স্বামী ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অপমান, ঘৃণা এবং অবহেলা পাওয়ার পর ঋযপগপঘ গীতা রায় নামে এক নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। একই সাথে তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তারা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে হলফ নামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হলফ নামায় তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। গীতা রায়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে আয়েশা, ছেলে সয়ন রায়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে মোঃ ইব্রাহীম
এবং মেয়ে স্বর্ণা রায়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে মোসাম্মৎ ফাতেমা ইসলাম। আয়েশা জানায়, গীতা রায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গাচুরা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন রায়ের স্ত্রী ছিলেন।তার স্বামী প্রতিনিয়ত তাকে অত্যাচার এবং নির্যাতন করতেন। এ অত্যাচার তিনি সহ্য করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন। গীতার মা বাবাও তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন । স্থানীয় মুসলমানরা বিপদে আপদে পাশে থাকতেন। উপায়ান্ত না দেখে তারা ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা স্বপরিবারে মুসলমান হয়ে যান।
মোঃ ইব্রাহীম এবং ফাতেমা বলেন, আমরা যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখেছি আমার মায়ের উপর আমার বাবার কি নিদারুন আত্যাচার। শুধু তাই নয়, আমাদের উপরও আত্যাচার করতো। আমাদেরকে অনেক বার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে।আমাদের যখন দুঃসময় তখন আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাইনি। যতটুকু সহযোগিতা পেয়েছি তা স্থানীয় মুসলমানদের কাছ থেকে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে মুসলমানরাই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমরা স্বপরিবারে মুসলমান হবো। তারই প্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। কালেমা পড়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ঈমান এনেছি। এখন আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি এবং রোজা রাখি। আমরা এখন ইসলামী রীতি নীতি অনুসারে জীবন গঠনের চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন আমরা যেন মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ঈমানের সহিত চলতে পারি।
এ ব্যাপারে আয়শা বলেন, ২০০৩ সালে স্বপন রায়ের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পূর্বেই তিনি দর্জি কাজ জানতেন।স্বপন রায় নরসুন্দরের কাজ করতেন।এ বিয়ের পূর্বে স্বপন রায়ের আরেকটা স্ত্রী ছিল। সে জুয়া খেলা ও নেশা করতো। বিভিন্ন সময় স্বপন রায় তাকে ব্যবহার করে উচ্চ সুদে টাকা এনে জুয়া খেলতো। এক পর্যায়ে জুয়ায় হেরে স্বপন রায় ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে গীতাকে তারই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর নিকট বন্ধক রাখে। সেখান থেকে মুক্তির পর স্বামীর সংসার থেকে সন্তানদের নিয়ে চলে যায় ।এরপর শরীয়তপুর শহরে একটি টেইলার্সের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এ কাজ করে ধারের অনেক টাকা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। তিনি তার সন্তানদের সাথে আলোচনা করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর হুজুর তার নাম রেখেছেন আয়শা, ছেলের নাম রেখেছেন মোঃ ইব্রাহীম এবং মেয়ের নাম রেখেছেন মোসাম্মৎ ফাতেমা ইসলাম।