ডামুড্যা প্রতিনিধি \ ডামুড্যা উপজেলার কনেশ^র গ্রামের কৃষককের ছেলে আব্দুর রশিদ গোলন্দাজ ছিলেন প্রায়ত পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ীর কেয়ার টেকার। এর পর প্রয়াত মন্ত্রীর ছেলে নাহিম রাজ্জাকের এপিএস হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যন নির্বাচিত হন।এরপরে চলতি বছর ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ থেকে বনে গেছেন কোটি পতি। ব্যবহার করেন বিলাস বহুল গাড়ী। নামে বেনামে রয়েছে তার অঢেল সম্পদের পাহাড়। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে শুরু করেন টেন্ডার বানিজ্য, বদলি বানিজ্য,নিয়োগ বানিজ্য ,মনোনয়ন বানিজ্য ও কোনঠাসা করতে শুরু করে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদেরকেও। ৫ই আগষ্ট গণঅদ্ভুথানের পর থেকে তিনি এলাকা থেকে পলাতক থাকায় নানা ভাবে চেষ্টা করে ও তার সংগে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
সরেজমিন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ^র গ্রামের পবন আলী গোলন্দাজের ছেলে আব্দুর রশিদ গোলন্দাজ । তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তিনি এসএস সি পাশ দেখালে ও এলাকার লোকজন বলছেন অষ্টম শ্রেনী পাশ করেছে। তিনি ১৯৯৫ সালে প্রায়ত পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এর বাড়ীর কেয়ার টেকার হিসাবে কাজ শুরু করতেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আশার পর শরীয়তপুর ০৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক পানি সম্পদ মন্ত্রী হন। সেখানে তাকে ব্যাক্তিগত এ পি এস হিসাবে নিয়োগ করেন। সে থেকে আর আব্দুর রশিদ গোলন্দাজকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। ২০১১ সালে শরীয়তপুর ০৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মারা যাওয়ায় ঐ আসনটি শূন্য হওয়ার পর ২০১২ সালে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তার পিতার নিযোগকৃত আব্দুর রশিদ গোলন্দাজ কে তার ব্যক্তিগত সহকারী (এ পি এস) হিসেবে রেখে দেন। নাহিম রাজ্জাকের এপি এস হওয়ার পর থেকে তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে শুরু করেন রন টেন্ডার বানিজ্য, বদলি বানিজ্য,নিয়োগ বানিজ্য ,মনোনয়ন বানিজ্য ও কোনঠাসা করতে শুরু করে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদেরকে ও। টাকার বিনিময়ে সুযোগ দিতে থাকেন হাইব্রীড নেতাু কর্মীদেরকে।
এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ডামুড্যা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দলীয় ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা না থাকলে ও স্থানীয় এম পি নাহিম রাজ্জাক ত্যাগী নেতা কর্মীদের মনোনয়ন না দিয়ে আব্দুর রশিদ গোলন্দাজ কে ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর পর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিদন্দী প্রার্থীদের কে মাঠে নামতে না দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এককথায় জোর করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ তার হাতের ইশারায় মনোনয়ন দেওয়া হতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রাথীদের। এত করে কামিয়েছেন শত কোটি টাকা। অথচ নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া তথ্যে তিনি উল্লেখ করেন যে তার কাছে নগদ ৫ লাখ
টাকা,ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৫৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৮ টাকা। গাড়ির মূল্য ২৭ লাখ টাকা। স্বর্ন ও মূল্যমান পাথর ৪০ ভরি মূল্য ৬ লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ টাকা। আসবাবপত্র মূল্য ২ লাখ টাকা। অকৃষি জমি ২৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৫ শতাংশ। আসবাবপত্র মূল্য ২ লাখ টাকা, বাড়ি ও ফ্লাট মূল্য ৫০ লাখ ৩৬হাজার ৯০০ টাকা।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই থেকেই নাহিম রাজ্জাকের বদলৌতে বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন তিনি।গত ৪ আগষ্ট পর্যন্ত ডামুড্যায় প্রচন্ড দাপটের সঙ্গে চলতেন আব্দুর রশিদ গোলান্দাজ। ৫ আগষ্টের পর থেকে এমন দাপট দেখানো উপজেলা চেয়ারম্যানের খোঁজ পাওয়া দুরের কথা আতœগোপনে আছেন।
স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী আতাউর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা বলেছেন, আব্দুর রশিদ গোলান্দাজ এর হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপি নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিগত ১৫ বছরে দুই হাতে অর্থ কামিয়ে এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, আমরা সকলেই জানি প্রতিটি উপজেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মিত হয়। ্্এ রশিদ গোলান্দাজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমপিকে ম্যানেজ করে নিজ ইউনিয়ন কনেশ্বর এর নিজ বাড়ির পাশে মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং তিনি নিজেই মডেল মসজিদের ঠিকাদার ছিলেন।
সুলতান হোসেন নামে কনেশ্বর ইউনিয়নের এক মুরব্বি জানান, রশিদ গোলান্দাজ এর বাড়িতে কোন রকম একটি দো চালা টিনের ঘর ছিলো। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সে বাড়ি এখন দোতলা আলিশান বিল্ডিং রয়েছে।
উপজেলা আওযামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাঝী বলেন, রশিদ গোলান্দাজ এর জন্য আমরা এমপির কাছে ভিড়তে পারতাম না। রশিদ নিজের স্বার্থ রক্ষায় আমি সহ আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের নামে মিথ্যা কথা বলে এমপির কান ভারি করে রাখতো। এমপিও কিছু যাচাই বাছাই না করে রশিদ এর কথাই শুনতেন। ৫ আগষ্টের পর রশিদ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু আমি জনগণের সাথেই আছি।
এ ব্যাপারে আব্দুর রশিদ গোলন্দাজের মুঠোফোন ও হোয়াটস অ্যাপে বার বার ফোন দিয়ে ও তাকে পাওয়া যায়নি।