মোঃ আবুল হোসেন সরদার॥ দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলেল ২১টি জেলার প্রায় ৭কোটি মানুষের প্রাণের দাবী ছিল পদ্মায় সেতু। সেই পদ্মায় স্বপ্নের সেতু নির্মিত হয়েছে । সেতু চালু ও হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর উত্তরাংশ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া দক্ষিনাংশ শরীয়তপুরের জাজিরায় অবস্থিত। গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতুর দ্বার উন্মোচন করে দেয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা অনন্দ বিরাজ করছিল। সেটা যেন ঈদের চেয়ে ও বেশী। কেননা দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন তাদের পূরন হয়েছে। তারা এ সেতু পার হয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌছাবে। এ অঞ্চলেল উৎপাদিত পন্য সামগ্রী দ্রুত সময়ে রপ্তানি করে ন্যায্য মূল্য পাবে। এলাকায় শিল্প কল কারখানা গড়ে উঠলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বেকারত্ব দুর হবে। মানুষের পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। দেশ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাবে। এ বুকভরা আশা নিয়ে বাসা বাধলে ও শরীয়তপুর টু ঢাকা মহাসড়কের দুরাব্স্থার কারনে সব আশাই যেন গুড়ে বালির মত হয়ে যাচ্ছে। ২৬ জুন জনসাধারনের চলাচলেল জন্য যানবাহন চলতে সেতুটি খুলে দেয়ার পর শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী বিভন্ন পরিবহন সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করেছেন। এরমধ্যে বিআরটিসি, শরীয়তপুর পরিবহন,শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস ও পদ্মা ট্রাভেলস অন্যতম।প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হর হামেশা শরীয়তপুর-ঢাকা যাত্রিরা যাতায়ত করে থাকেন।এ যাত্রা পথে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার জমদ্দার বাড়ি মোড় থেকে জেলঅ সদর বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তাটি সরু থাকার কারনে দুটো বাস পাশাপাশি ক্রোস করতে অনেক কষ্ট হয়। নিদিষ্ট কোন জায়গায় একে অপরকে সাইট দিতে হয়। অন্যথায় দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।ফলে হরহামেশাই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে ২ঘন্টার রাস্তায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রিদের। এ রাস্তা দিয়ে যাতায়ত করতে যাত্রিদেরকে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। কোন সময় যেন বাসটি কাত হয়ে খাদে পড়ে জীবন টুকু শেষ হয়ে যায়। পদ্মাসেতুর শেষাংশ শরীয়তপুরে হলে ও এটার সুফল ভোগ করছেন মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ,ফরিদপুর,সহ অন্যান্য জেলাবাসি। তাদের জন্য নাওডোবা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যে সড়কটি ফোরলেন হয়েছে তাতে ঐ সব জেলার লোকজন সহসাই আরাম আয়েশে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিরাপদে অল্প সময়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন।আর শরীয়তপুরের লোকজন চেয়ে চেয়ে তাদের আরাম আয়েশ খেয়াল করছেন। এখানে মমতাজের একটি গান যেন প্রযোজ্য হয়েগেছে। তিনি গাইছেন ”বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে হাইটা যায় ,ফাইট্টা যা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়” । যদিও শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদের পক্ষথেকে বলা হচ্ছে জমি অধিগ্রহনে বিলম্বি হওয়ার কারনে সড়কের কাজে বিলম্ব হয়েছে। তাদের কথা কাজ চলমান রয়েছে। যথা সম্ভব দ্রæত কাজ শেষ করা হবে। তবে ফোরলেন প্রকল্প হলে ও আপাতত ডাবল লেনের সড়কের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হতে কম করে হলে ও তিন বছর সময় লাগবে। এ ছাড়া শরীয়তপুর পরিবহনে স্থানীয় মালিক গ্রুপের সিন্ডিকেটের কারনে ও যাতি সেবা বঞ্চিত হচ্ছে শরীয়তপুরবাসি। সেতু খুলতে না খুলতেই শরীয়তপুর বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপ নিজস্ব পরিবহন শরীয়তপুর সুপার সাভিস ব্যতিত অন্য সকল পরিবহনে যাতি উঠানামা করতে বাধার সৃষ্টি করছে। সময় সুযোগে বিআরটিসি সহ অন্যান্য বাস ভাংচুর ও শ্রমিকদের হুমকি ধমকি দিয়ে অন্যান্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এ সব কারনে যাত্রিরা বাসষ্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের জন্য বসে থকেতে হচ্ছে।হঠাৎ করে একটা বাস আসলে হুড়োহুড়ি করে কিছু লোক উঠে পরে।বাকিরা আবার বসে থাকে। কেননা যাত্রির তুলনায় বাসের সংখা কম। শরীয়তপুর সার্ভিস ছাড়া অন্যান্য পরিবহন বন্ধ। এ ভাবে শরীয়তপুর বাসি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে পাশাপাশি সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। উপায়ান্ত না পেয়ে অনেক যাতি ছোট খাট বাইক নিয়ে মাঝির ঘাটে গিয়ে ট্রলার সিবোট বা লঞ্চ করে ওপারে গিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। এ অঞ্চলেল মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু হলে ও একটি সড়ক ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে সুফল পাচ্ছেনা। তাদের স্বপ্ন পূরন হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে।
শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রি মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মাসেতু হয়েছে ঠিক।আমাদের কাছে এখনো সুখের স্বপ্ন। আমরাতো সুফল পাচ্ছিনা।একদিকে রাস্তা নেই । অন্য দিকে পরিবহনের সিন্ডিকেট। এ সব কারনে শরীয়তপুরের লোকজন পদ্মাসেতুর সুফল পাচ্ছি না।
যাত্রি আশিকুর রহমান বলেন, গাড়ি কম থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে গাড়ি পাইনা। তাছাড়া সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশী ভাড়া আদায় করছে। এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইলে বলে এই ভাড়ায় গেলে ওঠেন । নচেৎ অন্য ব্যবস্থা করেন।
পদ্মা ট্রাভেলস এর চেয়ারম্যান নড়িয়া পৌর মেয়র এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবহন সিন্ডিকেট এর কারনে শরীয়তপুরের যাত্রিরা সেবা বঞ্চিত। শরীয়তপুর বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের তাদের পরিবহনের ১৫টি বাস ছাড়া অন্য সকল বেসরকারী পরিবহন সহ বিআরটিসি বাস এ শরীয়তপুর সদর থেকে ছাড়তে দিচ্ছেনা। তারা তাদের পরিবহনের শ্রমিক দিয়ে যাত্রি ও অন্যান্য পরিবহনের লোকজনদের হয়রানি করে ও শ্রমিকদের হুমকি দেয়।
শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের নেতা ফারুক আহম্মেদ তালুকদার কে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ্য বলে ফোন কোটে দেন।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেদওয়ান আহম্মেদ ভুইয়া বলেন, জমি অধিগ্রহনে বিলম্ব হওয়ায় কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। কাজ চলমান আছে। অধিগ্রহনের কাজ শেস হয়েগেলে যথা সম্ভব দ্রæত কাজ শেষ করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ পারভেজ রহমান বলেন, রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তার যে অংশটুকুর অধিগ্রহনের টাকা পরিশোধ হচ্ছে ঐ অংশের কাজ শেষ করা হচ্ছে। কাজ শেষ করতে একটা নিদিষ্ট সময় লাগবে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভ রাস্তার কাজ শেষ করতে।