পদ্মাসেতু পার হলেই সড়কে  যানজটে চরম ভোগান্তি শরীয়তপুরবাসীর

পদ্মাসেতু পার হলেই সড়কে যানজটে চরম ভোগান্তি শরীয়তপুরবাসীর

Social Share Now

স্বপ্নের পদ্মাসেতুর সঙ্গে লাগোয়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে সুবিধাভোগী হওয়ার কথা শরীয়তপুরবাসীর। তাদের স্বপ্ন ছিল খুব অল্প সময়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পার হয়ে দ্রæত পৌঁছে যাওয়া যাবে শরীয়তপুর শহরে।কিন্তু বাস্তবে তেমনটি না হয়ে হচ্ছে ভোগান্তি। পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে জেলা শহর পর্যন্ত রাস্তাটি এতোটাই সরু বা অপ্রস্থ ও ভাঙা যে বিপরীত মুখী দু’টি বাস পাশাপাশি যেতে পারে না। এমন রাস্তায় দ্রæত গাড়ি চালানো সম্ভব নয়, ফলে যানজট লেগেই থাকে। এ জন্য কাঙ্খিত সুবিধা পাচ্ছেন না এ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে অন্তঃত শতাধিক বিলাসবহুল বাস চালু করেছে বিভিন্ন পরিবহন। এ সরু সড়কে একসঙ্গে দুই দিক থেকে আসা দু’টি বাস চলাচল অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ। এ সড়কে তীব্র যানজটের ঘটনা নিত্যদিনের। যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছুতে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায়। তাই এ জেলার জনগণের দাবি, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত সড়কটি ফোর লেনে রুপান্তরিত করা অতীব জরুরী। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন থেকে পদ্মা সেতুর স্বাগতিক জেলা শরীয়তপুরে যানবাহন চলাচলের চাপ বেড়ে গেছে। শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে এরই মধ্যে শতাধিক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস চালু করে বিভিন্ন পরিবহন। এর মধ্যে রয়েছে বিআরটিসি, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস, গেøারি পরিবহন, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন, ফেম পরিবহন। কিন্তু পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত সড়কটি সরু ও ভাঙা থাকায় প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছুতে অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগছে। এছাড়া সরু সড়কে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পটির মূল নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালে শুরু হলেও শরীয়তপুরের সংযোগ সড়কটি এতো দিন কেন হয়নি? সেতু হওয়ার পরও কেনো কাজ হচ্ছে না? এ ব্যাপারে তৎকালীন জনপ্রতিনিধিদেরকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরাা।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুর নাওডোবা অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে শরীয়তপুর জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত চার লেনের সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রেমতলা থেকে ৩৪ মিটার প্রস্থের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সেটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কটি নির্মাণ হলে জনভোগান্তি অনেকটা কমে আসবে। শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এ ব্যাপারে চাহিদাপত্র দেন। এরপর ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি একনেক সভায় ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দিন থেকেই শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে প্রায় শতাধিক পরিবহনের বাস চলাচল শুরু করছে। সরু সড়কের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রæত চার লেন সড়কের কাজ সম্পন করার দাবি জানাচ্ছি।এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদোয়ানুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়কের জমি অধিগ্রহণ এবং করোনার কারণে দুই বছর দেরি হওয়ায় পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কটির নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে চার লেন সড়ক বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুবিধা নিশ্চিতে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে তিনটি গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আপাতত দুই লেনের সড়ক হলেও পরে সেটি চার লেন করা হবে। এরই মধ্যে তিনটি প্রকল্পেরই টেন্ডার শেষ হয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছে এবং ২০২৪ সালে মধ্যে শেষ হবে।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সততা ও সাহসিকতার কারণেই আজ পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আর পদ্মা সেতুর চালুর সঙ্গে সঙ্গে শরীয়তপুরের মানুষ সড়কের সুফল না পাওয়ায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যথিত। পদ্মা সেতুর প্রথম থেকে উদ্যোগ নিলে আগেই রাস্তা হয়ে যেত। আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পরই শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাককে নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। করোনার মধ্যেও টেন্ডার হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। আমরা দ্রæত কাজ করছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। শরীয়তপুরবাসী সুফল পাবেন ইনশাল্লাহ। সাময়িক কষ্টের জন্য শরীয়তপুরের মানুষের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমিও এ জনপদের সন্তান। আমি এখানেই বসবাস করি। এ সড়ক দিয়ে আমিও যাতায়াত করি। আস্থা রাখুন, কাজ দ্রæত শেষ হবে। নির্বিঘ্নে মানুষ শরীয়তপুর ও ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন।

Leave a Reply